অধ্যক্ষের বাণী

Education is the backbone of a nation. শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। বাক্যটি অনেক পুরাতন আমল থেকে চলে আসা এক প্রবাদ বচন। সত্যি কথা বলতে কি এর সাথে দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই।  এ কারণে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা বিস্তরে চলছে ব্যাপক মহড়া।প্রতিযোগিতা চলছে জ্ঞান বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে। আর এ লক্ষে সৃষ্টি হয়েছে নামিদামি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো অনেক কিছু। সন্দেহ নেই এর ফলস্বরূপ সৃষ্টি লাভ করেছে জ্ঞান বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নয়ন। শহরগুলোতে ওই যে চোখ ধাঁধানো নিলয়বাতির সমাহোর চাকচিক্যময় বহুতল ভবন, কালো প্রসারমান তেলতেলে রাস্তাঘাট। সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যোগাযোগ করার অভূতপূর্ব আধুনিক সব ব্যবস্থা। যা পৃথিবীকে একবারে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে বর্তমানের এই শিক্ষা ব্যবস্থা। এর কাছে আমরা ঋণী চরমভাবে।কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ তথা নীতি-নৈতিকতার কি কোন উন্নতি ঘটেছে? একেবারে চোখ বুজে বলা যাবে না। সামাজিক সাংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের প্রান্ত সীমায় দাঁড়িয়ে আমাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থা। অশান্তির দাবানল আর চতুর্দিকে বিষবাষ্পের ন্যায় মহামারী  আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মায়া মমতা ও সহনশীল মানসিকতা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত।তদস্থালে স্থান লাভ করেছে পারস্পরিক বিদ্বেষ। শত্রুতায় ভরে উঠেছে আজ গোটা সমাজ ব্যবস্থা। পাশ্চাত্যের প্রভাবে কথিত উপর ওয়ালাদের পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়ে। খুন ধর্ষণ রাহাজানি আজ নিত্য দিনের খবরের শিরোনাম। শিক্ষা সংস্কৃতির নামে উলঙ্গপনা আর বেহায়াপনায় লিপ্ত হয়েছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। মাদকতার নীল ছোবলে আক্রান্ত আমাদের যুব সমাজ। দুর্নীতির রাহু ভর করেছে রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

“might is right” তথা জোর যার মুল্লুক তার এই বর্বর নীতি সর্বত্র লক্ষ্যনীয়।মানবাধিকার আজ ভূলন্ঠিত। এ বিশ্বের সভ্যতা সৃষ্টিতে জ্ঞান বিজ্ঞানের যেমন অবদান তেমনি এই জ্ঞান বিজ্ঞানের সৃষ্ট উপকরণ দিয়ে মানব জাতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। হাইপারসনিক বিমান পারমানবিক ও হাইড্রোলিক অস্ত্রের অধিকারী দেশগুলোই আজ বিশ্বের মোড়ল।একটি সমীক্ষায় বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের ৭৫ শতাংশই মানবজাতিকে ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষ মারার মারাত্মক মারনাঅস্তক এসব অস্ত্রের মাধ্যমে যা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চল তার  প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমিক গড়ে ওঠা এসব সভ্যতা গুলো আজ আধুনিক উপকরণ দিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক মৃত্যু যেখানে নেই, নেই কবর দেওয়ার জায়গা, জন্মানোই যেন তাদের আজন্ম পাপ। সুতরাং কোথায় আজ শান্তি কোথায় মানবতা এসব শব্দগুলো ডিকশনারি পাতায় বন্দি।আল কোরআনের ভাষায় বলতে হয় জলে স্থলে এই যে অশান্তি অরজগতা এসব কিছুই মানুষের দুহাতের অর্জন

বর্তমানেরএই শিক্ষা সভ্যতা আমাদের পৃথিবীতে এনে দিয়েছে বড় দুটি বিশ্বযুদ্ধ । আবারো তৃতীয় বিশ্বের যুদ্ধের হাতছানি দিচ্ছে চতুর্দিকে । মনে হচ্ছে আমরা কথিত  শিক্ষিত মানুষ গুলোই সৃষ্টি করবো কেয়ামতের ধ্বংসলীলা। নিজদেশ সহ পৃথিবীব্যাপী এই যে বিষাক্ত পরিবেশ তাকি অশিক্ক্ষার  ফল? না বস্তুগত শিক্ষার কুফল ? মূলত শুধুমাত্র বস্তুগত জ্ঞান-বিজ্ঞান মানুষকে অন্তঃসারশূন্য অমানুষে পরিণত করছে ।এর সাথে যদি নৈতিক তথা ধর্মীয় শিক্ষা না দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষিত এই মানুষটি হয়ে ওঠে ক্ষেত্রবিশেষ বাঘের ন্যায় হিংস্র এবং শিয়ালের ন্যায় ধূর্ত । আমরা আর শুনতে চাই না কোন বোমারু বিমানের কান ফাটা আওয়াজ। চাইনা মানুষ হত্যার মর্মান্তিক প্রতিযোগিতা । চাইনা দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। পরিবর্তন চাই শান্তির সু বাতাস গালাগালির পরিবর্তে চাই গলাগলির উষ্ণ অভিবাদন  । আসলে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড কথাটি একেবারে সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়  ।মানবিক মূল্যবোধ তথা নৈতিকতা বিবর্জিত শুধুমাত্র বস্তগত শিক্ষা কেবল কুফলই বয়ে আনে । নৈতিকতা সমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার চালু না হওয়া পর্যন্ত চতুর্মুখী এ ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের শুধুমাত্র চেয়ে চেয়েই দেখতে হবে মনে রাখতে হবে ধর্ম ছাড়া নৈতিকতা অচল।